টিভি ১০ নিউজ ডেস্ক : অবিভক্ত পশ্চিম দিনাজপুর জেলার বাম-গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা নেতৃত্ব তথা আর এস পি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক, বামফ্রন্ট সরকারের কারা ও সমাজকল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী কমরেড বিশ্বনাথ চৌধুরীর সংগ্রামী জীবনের আজ অবসান হয়েছে। শনিবার সকাল ৬ টা ৪০ মিনিটে এস এস কে এম হাসপাতালে তিনি প্রয়াত হন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
ছাত্র জীবন থেকেই তাঁর রাজনীতিতে হাতেখড়ি। বালুরঘাট কলেজে পি এস ইউ’র আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ওই কলেজে তিনবার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে জেলার বাম ও গণ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। ১৯৭৭ সালে তিনি বালুরঘাট বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক হন। ১৯৭৭ থেকে ২০১১ পর্যন্ত দীর্ঘকাল তিনি বালুরঘাটের বিধায়ক ছিলেন। ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিধায়ক ছিলেন। ১৯৮৭ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘকাল তিনি বামফ্রন্ট মন্ত্রীসভার সদস্য ছিলেন। ২০১৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তিনি আর এস পি রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
তাঁর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। তাঁর নিজের দল আরএসপি সহ বামফ্রন্টের অন্য শরিক দলের তরফেও প্রাক্তন মন্ত্রী ও আরএসপি নেতার মৃত্যুতে শোক জ্ঞাপন করা হয়েছে। প্রয়াত নেতাকে হাসপাতাল থেকে বিধানসভায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে প্রয়াত নেতার মরদেহ আরএসপি রাজ্য দফতরে এনে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়। তারপর সেখান থেকে তাঁর মরদেহ বালুরঘাটে তাঁর বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৯৭৭ সালে প্রথম বার বিধায়ক হন বিশ্বনাথ। ২০১১ সালে তৃণমূলের শঙ্কর চক্রবর্তীর কাছে হেরে গিয়েছিলেন তিনি।
ক্যানসার আক্রান্ত রাজ্যের প্রাক্তন কারামন্ত্রী বিশ্বনাথ চৌধুরীর চিকিৎসার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৬ জুলাই এসএসকেএমে ভর্তি করানো হয় প্রাক্তন মন্ত্রীকে। সেখানেই শনিবার সকালে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। প্রয়াত মন্ত্রীর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করে এক্স হ্যান্ডলে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, “রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী বিশ্বনাথ চৌধুরীর প্রয়াণে আমি দুঃখিত । উনি আমার বিরোধী রাজনীতি করলেও, আমাদের সম্পর্ক খুব ভালো ছিল। ওঁনার অসুস্থতার খবর পেয়ে আমরা ওঁনাকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু কোনো প্রচেষ্টাই কাজে এলো না। এই দু:খের দিনে আমি ওঁনার পরিবার-পরিজন, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মীদের আমার আন্তরিক সহমর্মিতা জানাই। প্রাক্তন মন্ত্রীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আজ রাজ্য সরকারী যে যে অফিস, কর্পোরেশন ইত্যাদি খোলা ররেছে সেখানে অর্ধদিবস ছুটি থাকবে।”
বিশ্বনাথবাবু দীর্ঘ দিন ধরে ক্যানসারে ভুগছিলেন। কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছিল। বেসরকারি হাসপাতালে ক্যানসারের চিকিৎসার বিপুল খরচ প্রাক্তন মন্ত্রীর পরিবার ও তাঁর দলের পক্ষে চালিয়ে নেওয়া কঠিন হয়ে উঠছিল। দল ও পরিবারের সদস্যেরা চাইছিলেন, যাতে সরকারি কোনও হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে বিশ্বনাথবাবুর চিকিৎসা করানো যায়। কিন্তু কোনও ভাবে তা পারছিলেন না। গত সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এই খবর পৌঁছতেই মঙ্গলবার তিনি বিশ্বনাথবাবুকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করাতে সক্রিয় হন।
চৌত্রিশ বছরের বাম শাসনকালে প্রায় আড়াই দশক ধরে মন্ত্রিত্ব সামলেছেন বিশ্বনাথ চৌধুরী। ১৯৮৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত কারা ও সমাজকল্যাণ দফতরের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। রাজনৈতিক মতাদর্শগত দিক থেকে তিনি ও তাঁর দল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পূর্ণ বিপরীতে অবস্থান করতেন। তবে রাজনীতির লড়াইয়ের পাশাপাশি ব্যক্তিগত স্তরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রবীণ বাম নেতাদের সঙ্গে বরাবরই সুসম্পর্ক রেখে চলেছেন। তাঁর চিকিৎসার সময় সেই সৌহার্দ্য দেখালেন মুখ্যমন্ত্রী।
Add comment